সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং গণমাধ্যমের উপর থেকে সমস্ত বিধি নিষেধ অবিলম্বে অপসারণ এবং অবাধ তথ্য প্রবাহের মাধ্যমে সাংবাদিকতার সক্রিয় পরিবেশ তৈরি করার দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উদযাপন উপলক্ষে বেসরকারি গবেষণা সংগঠন ‘ভয়েস’ রবিবার (৩ মে) একটি অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন ভয়েস এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ, আরটিকেল ১৯ এর এশিয়া আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, পরিকল্পনা সম্পাদক, সাম্প্রতিক দেশকাল এর আরশাদ সিদ্দিকী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মোসাইমুম রেজা তালুকদার প্রমুখ।
ভয়েস-এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ অবধি প্রায় ৫৪ জন সাংবাদিক ভয়ভীতিসহ নির্মমভাবে আক্রমণ, হয়রানি ও গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছে। উল্লেখ্য, শুধু এপ্রিল মাসে প্রায় ২০ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আক্রমণ ও হয়রানির শিকার হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য না পাওয়ায় প্রশাসনের বিধি নিষেধ এবং চাপ সহ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, যা অনভিপ্রেত।
আরটিকেল ১৯ এর এশিয়া আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন যে, কভিড-১৯ এর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অস্বচ্ছতা ও এর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় খোদ স্বাস্থ্যসেবাকর্মীরাই প্রশাসনিক হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। একদিকে সাংবাদিকরা যখন ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের খবর তুলে ধরছেন, অন্য দিকে সরকার তখন করোনা সংক্রান্ত তথ্য জানার সুযোগ সাংবাদিকদের জন্য আরো সীমিত করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার নামে সমালোচনাকারীদের কণ্ঠরোধে ব্যবহার করা হচ্ছে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০২০। প্রকৃত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিন্ন মত প্রকাশকারীদের ওপর খড়গহস্ত হচ্ছে সরকার।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং অপরাপর নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খরব করা হচ্ছে। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ এ বর্ণিত শর্তগুলো নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক হিসাবে কাজ করছে। এ সব শর্ত সমূহের পরিবর্তন করতে হবে। আইন জনমুখী না হলে, কথা বলার সংস্কৃতি তৈরী না হলে বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তথাকথিত আইনের ফাঁকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আটকে আছে।
মোসাইমুম রেজা তালুকদার, প্রভাষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, কভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য ও সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে হয়রানি, হেনস্তা, মামলা ইত্যাদি থেকে সুরক্ষা প্রদান করার জন্য “জন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন ২০১১” এর প্রয়োগের ব্যাপারে আরও সোচ্চার হতে হবে এবং মিথ্যা তথ্য ও গুজব মোকাবেলায় গৃহীত যে কোনো পদক্ষেপ আগে যথাযথ জুডিশিয়াল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যাচাই ও অনুমোদন করতে হবে।
আরশাদ সিদ্দিক বলেন যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু আইন দ্বারা বিচার করলে ভুল হবে। এটা সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নানান পরিস্থিতির সাথে সম্পৃক্ত। আমার মতে “গণমাধ্যম” এবং “স্বাধীনতা” এই দুটো প্রপঞ্চকেই নতুনভাবে দেখা প্রয়োজন। করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মোকাবিলায় নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা, কর্মপরিকল্পনায় অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রকট অভাব বাংলাদেশে সঙ্কটকে গভীরতর করছে। একই সঙ্গে তথ্যের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার শিকার হচ্ছে নজিরবিহীন দমন-পীড়নের।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ভয়েস এর গবেষক আফতাব খান শাওন, সেতুর পরিচালক আব্দুল কাদের, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের প্রোগ্রাম ম্যানেজার, কেএম এনামুল হক প্রমুখ।